বাঙালি তরুণ আরিফ, বয়স মাত্র ২৭, স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। স্টুডেন্ট ভিসায় পড়াশোনা করছিল, কিন্তু বইয়ের পাতার পাশাপাশি জীবনের কঠিন বাস্তবতাও তাকে কাজের সন্ধানে ঘুরিয়ে বেড়াতে বাধ্য করেছিল। একদিন এক ক্যাফেতে পার্ট-টাইম কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয় ৩৮ বছরের অস্ট্রেলিয়ান নারী এমিলির সাথে।
এমিলি ছিল স্বাধীনচেতা, শিক্ষিত, আর জীবনের নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ।।
শুরুটা ছিল খুব সাধারণ—কফি বানানোর সময় দু’জনের হালকা আলাপ। ধীরে ধীরে আলাপ গড়ালো বন্ধুত্বে, আর বন্ধুত্ব রূপ নিলো গভীর সম্পর্কে। আরিফের সরলতা, হাসি আর জীবনের জন্য সংগ্রামের দৃঢ়তা এমিলির মন ছুঁয়ে গেল। অন্যদিকে এমিলির পরিণত বুদ্ধি আর মমতা আরিফকে আশ্রয় দিল এক নতুন ভরসার। বয়সের ফারাক তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেল। তারা বুঝল, ভালোবাসা সংখ্যা দেখে জন্মায় না, জন্মায় হৃদয়ের মিলন থেকে।
কয়েক মাস পর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলো। বিয়ের পর এমিলি আরিফকে বলল, "তোমার দেশ কেমন? তোমার পরিবার?" আরিফের চোখ ভিজে গেল—সে বহুদিন ধরে মায়ের রান্নার গন্ধ, বাবার ডাক, গ্রামের মাটির পথের জন্য মন কাঁদাচ্ছিল। এমিলি একদিন বলল, "চলো, বাংলাদেশে যাই। তোমার মানুষগুলোকে আমি জানতে চাই।"
অবশেষে আজ সেই দিন এসেছে। ঢাকা বিমানবন্দরে নামার সময় আরিফের বুক কেঁপে উঠল। তার পাশে এমিলি, বিদেশি সাজে কিন্তু মনে ভীষণ আন্তরিক। গ্রামের বাড়ির পথে সে এমিলির হাত শক্ত করে ধরল। পথে যেতে যেতে বলল, "ওরা হয়তো অবাক হবে, হয়তো প্রশ্ন করবে, কিন্তু আমি জানি আমার মা-বাবা তোমায় মেনে নেবেন।" এমিলি হাসল, বলল, "আমি শুধু তোমার পরিবারের মেয়ে হয়ে উঠতে চাই।"
গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতেই কৌতূহলী চোখে সবাই তাকিয়ে রইল। আরিফ মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "এটাই আমার স্ত্রী, এমিলি।" কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর মায়ের চোখ ভিজে গেল, সে বলল, "আমার ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ।"
সেই মুহূর্তে এমিলি শুধু একজন বিদেশি নারী নয়, আরিফের পরিবারের একজন হয়ে উঠল। ভালোবাসা, সংস্কৃতি আর আস্থার মেলবন্ধন হয়ে গেল তাদের নতুন জীবনের গল্প।

No comments:
Post a Comment