চোরের মায়ের বড় গলা

চোরের মায়ের বড় গলা

 ইফফাত রাতে ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় চোখে মোবাইলের টর্চের আলো অনুভব করায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। কেউ একজন মোবাইলের ফ্ল্যাশ দিয়ে গোপনে উনার ভিডিও ধারণ করছিলেন। উনি চিৎকার করে উঠেন। লোকটিকে ধরে ফেলেন। 



ইফফাত একজন সরকারি শিক্ষিকা। ঢাকায় স্বামী সন্তানসহ থাকেন। একদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন পাবনায়। বান্ধুবীর বাসায়। সারাদিন বান্ধুবীর সাথে পাবনা ঘুরে বেড়ান। হাসিখুশি মাখা ছবি তুলেন। 


কিন্তু তিনি কল্পনাও করতে পারেননি রাতে উনার জন্য কী অপেক্ষা করছেন। 


পাবনায় সেই বান্ধুবীর বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। উনার রুমে ঢুকে পড়েন বান্ধুবীর ভাই মামুন। মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করতে থাকে। চোখে ফ্লাশের আলো অনুভব করায় উনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। 


ঘুম ভেঙ্গে উনি দেখতে পান মামুনকে। ইফফাত চিৎকার করতে থাকেন। উনার চিৎকার শুনে বান্ধুবী পাশের রুম থেকে চলে আসে। 


বান্ধুবী সব শোনার পর ভাইকে বাঁচাতে বলে, 'যা হয়েছে হয়েছে। এখানেই দ্য ইন্ড কর। ঝামেলা বাড়াইও না।' 


ইফফাত বারবার বলতে থাকে, 'আমি দেখতে চাই কী ভিডিও করেছে।' 


কারণ সে জানে একটি মেয়ের জীবন ধ্বংস করার জন্য পর্ণগ্রাফি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। মানুষ কখনও দেখতে যাবে না। সেটি জোরপূর্বক নাকি গোপণে ধারণকৃত।  


ইফফাত প্রমাণ রাখার জন্য এবং ঐ ভিডিও ডিলিট করার জন্য বারবার দেখতে চায় ভিডিওগুলো। 


কিন্তু ওরা কিছুতেই দেখতে দিবে না। কারণ ফোন চেক করতে দিলে তো ভাই অপরাধী প্রমাণিত হয়ে যাবে। 


এমন অবস্থায় আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়ে ইফফাত ঢাকায় চলে আসে। ইফফাতকে বারবার তারা ফোন করে হুমকি দিতে থাকে। তুমি যদি আইনের আশ্রয় নাও। তাহলে আমরা তোমার নামে চুরির মামলা দিবো। 


ইফফাত ঢাকায় জিডি করে। অন্যদিকে পাবনায় তাঁর বান্ধুবী মামলা করে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, 'ইফফাত আমাদের বাসায় এসে কফির মধ্যে ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে। সবাইকে অজ্ঞান করে আমার ২০ ভরি স্বর্ণ চুরি করে ঢাকায় পালিয়ে গিয়েছে।' 


আমাদের দেশের মহামান্য আদালতও মামলা আমলে নিয়ে পাবনায় ইফফাতকে তলব করে। 


ইফফাতের উকিল আদালতকে জানায়, একজন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা। দুই বাচ্চার মা। সে ঢাকা থেকে বান্ধুবীর বাসায় গিয়ে সবাইকে অজ্ঞান করে ২০ ভরি স্বর্ণ চুরি করবে। জেনে শুনে এই ঝুঁকি কেউ নিবে? এটা তো কমনসেন্স নাকি? একজন অবিবাহিত মেয়ের কাছে ২০ ভরি স্বর্ণ কী আদৌ থাকা সম্ভব? 


বান্ধুবী আদালতে চুরির পক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। অন্যদিকে ইফফাতের উকিল সে নির্দোষ এর স্বপক্ষে প্রমাণ আদালতে উপস্থিত করেন - আদালত বর্তমানে ইফফাতকে জামিন দিয়েছেন। 


কোন কিছু প্রমাণের আগেই  তাঁর লাইফটা বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ওর চরিত্র নিয়ে মিথ্যা নিউজ ছড়িয়ে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছে। শিক্ষার্থীদের সামনেও মুখ দেখাতে পারছেন না উনি। 


উনি বলেছেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তদন্ত হোক। সেই অনুযায়ী বিচার হোক।   


ইফফাত দুই সন্তানের মা। একজন শিক্ষিকা। একজন স্ত্রী।  


নিজ সম্মান, সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে হয়ে গেলেন চোর। তাও তাঁর বান্ধুবীই তার পিঠে চাকু মেরেছে। 


সব ক্ষত শারীরিক নয়, কিছু ক্ষত আসে বিশ্বাসঘাতকতার আঘাতে।

বন্ধুত্ব কেবল হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি নয়, বরং আস্থার জায়গা। 


কখনও কী নিজেকে প্রশ্ন করেছি? কাকে বন্ধু বানাচ্ছি? 


একজন বন্ধুর আচার আচরণ কথা বার্তার মধ্যে কোন না কোনভাবে তাঁর চরিত্রের পোস্টমর্টেম করা যায়। সেই অনুযায়ী সতর্ক হওয়া যায়। এই সুরৎহাল রিপোর্ট অনেকে বুঝতে পারে। অনেকে পারে না। অনেকে টের পেয়েও একসাথে খায়, ঘুমায় ঘুরে। একদিন ধরা খায়। 


ছেলেদের বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করলে সর্বোচ্চ মারধোর করে আহত নিহত করে। কিন্তু মেয়েদের বান্ধুবী বিশ্বাসঘাতকতা করলে সেটার শুরুটা হয় চরিত্রের অস্ত্রপাচার দিয়ে।  


নারীকে ভাঙতে হলে চরিত্র নিয়ে আঘাত করাই সবচেয়ে সহজ অস্ত্র। তাই সাবধান।

No comments:

Post a Comment