kullu news
একটি ট্রেনের গল্প
৮ হাজার বছর আগের কঙ্কাল থেকে কিশোরের প্রতিকৃতি তৈরি
৮ হাজার বছর আগের কঙ্কাল থেকে কিশোরের প্রতিকৃতি তৈরি
আজ থেকে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে বর্তমান নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় মাথার এক কিশোর গুহার ভেতর একাকী মৃত্যুবরণ করেছিল। বিজ্ঞানীরা এখন এই প্রস্থর যুগের কিশোরের কঙ্কাল থেকে তার পুরো শরীরের প্রতিকৃতি (ছবি) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা ১৫ বছর বয়সী এই ছেলেটির নাম দিয়েছেন ভিস্টেগুটেন, নরওয়ের ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে 'ভিস্তের ছেলে'। ছেলেটির কঙ্কাল যেখানে পাওয়া গেছে, সে জায়গার নাম ভিস্তে।
নরওয়ের হামলে প্রেস্টগার্ড জাদুঘরে ভিস্টেনগুটের কঙ্কাল এবং কৃত্রিমভাবে নির্মিত তার পুরো ছবি প্রদর্শন করা হচ্ছে।
পুরো শরীরের ছবি তৈরি করতে কয়েকমাস সময় লাগলেও ১৯০৭ সাল থেকে ছেলেটির অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানী মহলে ধারণা ছিল। সেই সময় নরওয়ের র্যান্ডাবার্গের প্রস্থর যুগের একটি গুহায় প্রত্নতত্ববিদরা এই কিশোরের কঙ্কাল খুঁজে পেয়েছিলেন।
কেমন ছিল তার শারীরিক অবয়ব?
লম্বায় তার উচ্চতা ছিল ৪ ফুট ১ ইঞ্চি বা ১.২৫ মিটার। বয়সের তুলনায় এমনকি তখনকার মানুষের স্বাভাবিক উচ্চতার তুলনায় সে খাট ছিল। তবে তার একটি রোগও ছিল যার নাম 'স্কেপোসেফালি'। এই রোগের কারণে তার মাথা সামনের দিকে না বেড়ে পেছনের দিকে বাড়ে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ছেলেটি হয়তো একাকী মারা গেছে। এ জন্য তাকে 'নিঃসঙ্গ বালক' নামেও ডাকতেন বিজ্ঞানীরা। গুহার ভেতর থেকে তার কঙ্কাল যে অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে সে দেওয়ালে হেলানরত অবস্থাতেই মারা গেছে।
সুইডেনভিত্তিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অস্কার নীলসন বলেন, 'হয় মৃত্যুর পর তাকে কেউ এভাবে হেলান দিয়ে রেখে গেছে অথবা সে এভাবেই মারা গেছে। এ থেকে আন্দাজ করা যায় সে হয়তো নিঃসঙ্গভাব মারা গেছে, হয়তো পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব কারও অপেক্ষায় ছিল। তবে তার মুত্যু সম্পর্কে আমরা এর বেশি আর কিছু জানতে পারিনি।'
স্কেপোসেফালির কারণে মাথার গঠন পরিবর্তন হলেও শারীরীক ও মানসিক বৃদ্ধিতে এই রোগের কোনো প্রভাব নেই। নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব স্ট্যাভেঙ্গারের মিউজিয়াম অব আর্কিওলজির অস্থিবিদ, যিনি নিজেও এই কিশোরের অস্থি পরীক্ষা করেছেন, শন ডেক্সটার ডেনহাম বলেন, 'মাথা একটু বড় এবং উচ্চতা একটু কম হলেও ছেলেটি সুস্বাস্থের অধিকারী ছিল।'
গুহাটির ভেতরে যে পরিমাণ খাবারের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে সেখানে খাবারের কোনো অভাব ছিল না। বরং বাসিন্দারা গুহাটিতে থাকতেন, কাজ করতেন, ঘুমাতেন, রান্না করতে এবং খেতেন।
'ছবিতে ছেলেটির হাতে মাছ ধরার যে বরশি দেখা যাচ্ছে, হুবহু একইরকম না হলেও এমন একটি বরশি গুহার ভেতরেও পাওয়া গেছে।
শরীরের পূর্ণ ছবি তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা প্রথমে ছেলেটির কঙ্কালকে কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান করেন। এরপর সেখান থেকেব পাওয়া অবয়বেকর একটি প্লাস্টিকের রেপ্লিকা তৈরি করেন নেলসন। কিন্তু তিনি ছেলেটির মুখের টিস্যুর ঘনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। এ জন্য তিনি বর্তমানে উত্তর ইউরোপের ১৫ বছর বয়সী একজন ছেলের টিস্যু কেমন হতে পারে, সেখান থেকে ধারণা নেন। নেলসন বলেন, '৮০০০ বছর আগে জীবিত থাকা একটি ছেলের সঙ্গে এটি কতটা মিলল, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের অনুমান অনুসারে সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পেরেছি।'
আর কী বোঝা গেল?
কঙ্কাল পরীক্ষার সময় নীলসন দেখেন, ছেলেটির কপাল তুলনামূলক ছোট এবং গোল। সম্ভবত স্কেপোসেফালির কারণে এমনটা হয়েছে। এ ছাড়া তার নাকের উপরের অংশ সংকীর্ণ থাকলেও নিচের দিকটা প্রশস্ত ছিল।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে ছেলেটির শরীর ও চোখ ছিল বাদামি রঙের আর চুল ছিল ঘন কালো, যা সে সময় ওই অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।
ছেলেটির পূর্ণ অবয়ব তৈরির সময় তার মুখে একটু হাসি দিতে চেয়েছিলেন নীলসন। কিন্তু 'ছেলেটি যে একাকী মারা গেছে' এই চিন্তা তিনি মাথা থেকে সরাতেই পারেননি।
'আমি তাকে কল্পনা করেছি সে হয়তো এখনই সমুদ্রের দিকে যাবে (তাকে যেখানে পাওয়া গেছে, তখন তার খুব কাছেই ছিল সমুদ্র) মাছ ধরতে। নরওয়ের এই অংশটিতে অনেক বাতাস থাকে। তাই আমি তার ছবিতে চুল ও কাপড় বাতাসে নড়ছে এমন একটা দৃশ্য রাখার চেষ্টা করেছি।'
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Are .ML domains free?
Are .ML domains free?
Yes, .ML domains are free, but there are some conditions and limitations that come with this offer.
.ML is a country code top-level domain (ccTLD) for Mali, a country in West Africa. In 2013, the government of Mali made a deal with a company called Freenom to offer free .ML domains to anyone who wanted one. Freenom is a Dutch company that provides free domain name registration services using a number of TLDs, including .TK, .CF, .GA, and .ML.
The free .ML domain offer has been available since 2013, and it has been very popular with people all over the world. The offer is still available as of my knowledge cutoff date of September 2021. However, it is important to note that the free .ML domain offer comes with some conditions and limitations.
Firstly, while the initial registration of a .ML domain is free, you will need to pay a renewal fee if you want to keep the domain name after the first year. The renewal fee is currently set at $15 per year, which is higher than the cost of many other TLDs. If you do not renew your domain name, it will be released back into the pool of available domain names, and someone else will be able to register it.
Secondly, there are some restrictions on the types of websites that can be hosted on a .ML domain. According to Freenom's terms of service, you cannot use a .ML domain for websites that contain "obscene, indecent, or offensive content," or that are "defamatory, libelous, slanderous, or threatening." You also cannot use a .ML domain for websites that promote "hate speech, discrimination, or violence." If you violate these terms of service, Freenom reserves the right to suspend or terminate your domain name registration.
Thirdly, there are some technical limitations associated with .ML domains. For example, some email servers may block emails from .ML domains because they are associated with high volumes of spam. Additionally, some web hosting providers may not support .ML domains, or may charge extra fees for hosting them.
In conclusion, .ML domains are free to register, but there are some conditions and limitations that come with this offer. While the initial registration is free, you will need to pay a renewal fee if you want to keep the domain name after the first year. Additionally, there are restrictions on the types of websites that can be hosted on a .ML domain, and there are some technical limitations associated with them as well. If you are considering registering a .ML domain, it is important to carefully consider these factors and to choose a domain name that fits your needs and budget.
what is the lowest cost of domain?
The cost of a domain name can vary greatly depending on a number of factors. These factors can include the type of domain name you want, the domain registrar you choose, and the length of time you register the domain for. In general, the lowest cost of a domain name is around $0.99 per year. However, there are many other factors that can affect the cost of a domain name, which we will explore in more detail below.
Firstly, it is important to understand what a domain name is. A domain name is the unique address that identifies a website on the internet. It is the part of a website address that comes after the "www." and before the ".com", ".org", ".net" or other top-level domain (TLD) extension. For example, in the website address "www.example.com", "example" is the domain name.
One of the factors that can affect the cost of a domain name is the type of domain you want. There are many different types of domains available, including country-specific domains (such as .co.uk or .de), generic domains (such as .com, .org, or .net), and new TLDs (such as .blog, .club, or .app). The cost of each of these types of domains can vary depending on a number of factors, including the popularity of the TLD, the length of the domain name, and whether the domain is already registered or available for purchase.
Another factor that can affect the cost of a domain name is the domain registrar you choose. A domain registrar is a company that manages the registration of domain names. There are many different domain registrars available, including popular companies like GoDaddy, Namecheap, and Google Domains. The cost of a domain name can vary depending on the registrar you choose, as well as any additional services or features that they offer.
The length of time you register a domain name for can also affect the cost. Most domain registrars offer domain registration for a period of 1-10 years, with the option to renew the registration at the end of the term. Generally, the longer the registration period, the lower the cost per year. For example, registering a domain for 5 years may be cheaper per year than registering it for just 1 year.
In addition to the factors above, there are many other factors that can affect the cost of a domain name. These can include the demand for a particular domain name, the keywords included in the domain name, and the potential for future resale of the domain. In some cases, a domain name may be sold for millions of dollars, while in other cases it may be available for just a few dollars.
In conclusion, the cost of a domain name can vary greatly depending on a number of factors, including the type of domain, the domain registrar, and the length of registration. While the lowest cost of a domain name is around $0.99 per year, it is important to carefully consider all of the factors involved in purchasing a domain name, and to choose a domain name that fits your needs and budget.
সুখ
~~সুখ~~
শ্বশুর মশাই নিজের বাটি থেকে টুক করে একটা মাংসের টুকরো বৌমার পাতে দিয়ে দিলেন। বৌমা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে বলে, 'এ কি করলেন বাবা? আপনিই খান। সারাদিন আপনার যা পরিশ্রম'! মাংসের টুকরোটি ফেরত দেওয়ার জন্য সে জেদাজেদি করতে থাকে।
শ্বশুর মশাই অর্ধেন্দু বিশ্বাস তৃপ্ত মনে বৌমাকে বলেন, 'মা, আজ আমি খুব খুশি হয়েছি'।
বৌমা লিপা কৌতুহলী হয়ে জানতে চায়, 'কেন বাবা? কি হয়েছে'?'
অর্ধেন্দু বাবুর একটি বই বাঁধাইয়ের দোকান রয়েছে। বই বাঁধাইয়ে খুব নাম-ডাক তাঁর। অঢেল কাজ। বাড়ির সঙ্গেই দোকান। বাড়ির মধ্যেই রয়েছে আরও দুটি রুম। সংকীর্ণ জায়গা। বাড়ির চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ডাঁই করা বই। একটি রুমে থাকেন লিপার শ্বশুর ও শাশুড়ী। আরেকটি রুমে লিপা ও তাঁর স্বামী। এছাড়াও রয়েছে এক অবিবাহিত ননদ। ননদটি কখনো বাবা মায়ের রুমে, কখনো সিঁড়ির নিচে থাকে। রাস্তার ধারের রুমটায় সারাদিন বই বাঁধাইয়ের কাজ করেন অর্ধেন্দু বাবু। ছেলেও হাত লাগান কাজে। লিপার বয়স অল্প। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর সদ্য বিয়ে হয়েছে। শ্বশুর মশাইয়ের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনা চালিয়ে যায় লিপা। কলেজে ভর্তি হয়েছে ম্যাথেমেটিক্স অনার্স নিয়ে। পড়াশোনা সেরে লিপা আজ শ্বশুর মশাইয়ের বই সেলাইয়ের কাজে হাত লাগিয়েছিল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পছন্দের বই গুলো একটু একটু করে পড়েও নিচ্ছিল। সেই দেখে শ্বশুর মশাই আজ খুব খুশি। সেই সূত্র ধরে শ্বশুর মশাই বৌমার প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'আজ আমি খুব খুশি। নতুন বিয়ে হয়েছে। এইটুকু একটা মেয়ে! সব জড়তা ছেড়ে আজ তুমি বই বাঁধাইয়ের কাজ করলে। তোমারই সংসার। এইভাবেই সংসারটাকে আগলে রেখো মা'।
এতক্ষণ শাশুড়ী মা চুপ করে ছিল। তিনি এবার অভিমানী সুরে বললেন, 'আমি কেউ নই বুঝি! এতো বছর রেঁধে বেড়ে খাওয়ালাম যে!'
শ্বশুর মশাই খুনসুটি করে বললেন, 'হুম, তাই উনি শুধু রান্না ঘরটাই চেনেন, বই বাঁধাই ঘরটা চিনতেই পারলেন না'!
সবাই হা হা করে হেসে উঠলো। খাওয়া শেষে সকলের বিছানা রেডি করে দিয়ে লিপা গেল ননদের কাছে। তাঁর কয়েকটা ম্যাথের প্রবলেম সলভ করে দিয়ে লিপা বললো, 'চল, এখন একটু লুডো খেলি'।
ননদ তো আনন্দে এক পায়ে খাড়া। লুডোর আসরে একে একে যোগ দিল লিপার শ্বশুর ও স্বামী। ওদিকে লিপার শাশুড়ী এক কোনে বসে ঘনঘন হাই তুলছে।
লিপার শ্বশুর মশাই শাশুড়ীকে বললেন, 'ওগো শুনছো! ঘুমিয়ে পড়ো যাও! আগামীকাল ভোর ভোর উঠতে হবে'।
লিপা কৌতুহলী হয়ে জানতে চায়, 'কেন? ভোরে উঠবে কেন'?
শশুর মশাই বললেন, 'একটা সারপ্রাইজ আছে'।
সবাই চুপ। সবাই ভাবছে, কি সারপ্রাইজ! লিপা জিদ ধরলো, 'আর টেনশন নিতে পারছি না। বলেই দাও না বাবা'।
শশুর মশাই বললেন, 'আগামীকাল সকাল সকাল আমরা সবাই মিলে মহিষাদল রথের মেলা যাবো'।
আনন্দে নেচে উঠলো লিপা। ননদ গিয়ে জড়িয়ে ধরলো বৌদিকে। লিপা আনন্দে বললো, 'বাবা, আমি ফুচকা খাবো'।
শ্বশুর মশাই আবেগ প্রবন হয়ে বললেন, 'আচ্ছা, আচ্ছা মা! যা খাবে তাই খাওয়াবো'।
এরপর প্রত্যেকেই দ্রুত বিছানায় চলে গেলো।
এরপর মাঝে কেটে গেল দশটা বছর। শ্বশুর মশাই মারা গেছেন ইতিমধ্যে। যুগের পরিবর্তনে ডিজিটাল মিডিয়ার আগ্রাসনে ছাপা বইয়ের জনপ্রিয়তাও কমেছে। ফলে বই বাঁধাইয়ের দোকানটাও বন্ধ হয়ে গেল। বছর পাঁচেক হল লিপা একটি হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছে। লিপার একটি সন্তানও হয়েছে। স্বামী একটা ছোট কোম্পানিতে কাজ করে এখন। ননদ বিয়ে করে চলে গেছে। শাশুড়ী মাতা আধ্যাত্মিক জগতে নিজেকে বন্দী করেছেন। সেই ছোট্ট একতলা বাড়িটা আজ আরও আধুনিক হয়েছে। সেটি এখন তিনতলা। ফ্লোরে মার্বেল দেওয়া। বাথরুম, কিচেন সবই আধুনিক।
এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় লিপা বাড়ির তিনতলায় একটি ঘরে এ সি চালিয়ে একাকী বসে আছে। এমনিতেই সময় কাটছে না লিপার। তার উপর একটু আগেই একটা ছোট বিষয় নিয়ে স্বামীর সাথে প্রবল ঝগড়া হয়েছে। স্বামী রাগ করে বেরিয়ে গেছেন বাজারে। ছেলে এক তলার একটি রুমে পড়াশোনা করছে। শাশুড়ী মাতা একটি অন্ধকার ঘরে ধ্যান করছেন। লিপার হঠাৎ চোখ পড়লো দেওয়ালে টাঙানো শ্বশুর মশাইয়ের ফটোটার দিকে। পরম যত্নে ফটোটা নামালেন লিপা। তাঁর চোখে জল। ফটোটা ভালো করে মুছে বিড়বিড় করে রুদ্ধ কন্ঠে লিপা বললো, 'বাবা, আগে ছোট ঘর ছিল। অনেক মানুষ ছিল। থাকার জায়গা ছিল না। কিন্ত অনেক আনন্দ ছিল। জীবনে সুখ ছিল। আর আজ অনেক বড় ঘর হয়েছে। মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। থাকার জায়গারও অভাব নেই। কিন্তু আজ আর আনন্দ নেই। জীবনে সুখ নেই'।
সুখ © রূপেশ কুমার সামন্ত
***ছবিতে আজলদীঘী লাল আমন চাল এর খুদের ভাত আর বাড়ির কবুতর এর দুইপিস মাংস 🙂
গল্প: আশ্রয়
রুমে বসেই পাশের রুম থেকে আমার বন্ধু রিফাত আর ওর স্ত্রীর ঝগড়া শুনতে পাচ্ছি। এমনকি ঝগড়ার মূল বিষয়বস্তু আমাকে নিয়েই। রিফাত বারবার তিথিকে বলছে,
"তুমি একটু চুপ করো! পাশের রুমে কিন্তু মারুফ আমাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছে। আর ওতো এখানে বেশিদিন থাকবে না, মাত্র তিনদিন। অফিসের কাজ সেরেই চলে যাবে বলছে। আর ঢাকাতে কেউ নেই দেখেইতো আমাদের এখানে এসেছে।"
রিফাতের কথা শেষ না হতেই তিথি উত্তেজিত কণ্ঠে বলে,
"আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না। কেনো আমাদের এখানেই আসা লাগবে কেনো? মেসে থাকতে পারলো না? আমার কি ঠ্যাকা পরছে যে এসব আলতু ফালতু মানুষকে রান্না করে খাওয়াবো? তুমি যদি একে বিতাড়িত না করো তাহলে আমি সাফ সাফ বলে দিচ্ছি আমি কোনো রান্নাবান্না করতে পারবো না।"
পরক্ষণেই আমি ঠাস করে একটি চড়ের শব্দ বেশ স্পষ্টভাবে শুনতে পেলাম। মুহূর্তেই আমার শরীরটা কেমন যেন করে উঠলো।
রাত এখন দশটা, তাই চাইলেও এই মুহূর্তে কোথাও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্টুডেন্ট লাইফে ঢাকা শহরকে ভেজে খেয়েছি বলা যায়। কতশত মানুষকে নিজের মেসে জায়গা দিয়েছি তার হিসেব নেই কিন্তু এই মুহূর্তে নিজের দিক ভাবলে চলবে না সেটাও ঠিক। কারণ একটি ফ্যামিলি বাসাতে অবশ্যই আমার মতো এমন অচেনা এক ছেলেকে জায়গা দিতে যেকোনো নারীরই মন চাইবে না, এটাই হয়তো স্বাভাবিক।
কোনোরকম ইতঃস্তত ভঙ্গিতে খাঁটের উপর বসে আছি এমন সময় রিফাত হাতে একটি বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। আমি নিশ্চিত হলাম এটা ও কিছুক্ষণ আগেই হয়তো দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছে। টেবিলের উপর প্যাকেটটি রেখে যখনি ও প্লেট নিয়ে আসতে আবার রুম থেকে চলে যেতে ধরবে তখনি আমি ওকে ডাক দিয়ে বলি,
"রিফাত! আমার অফিসের কাজ কালকেই শেষ হবে আর কালকে সকাল সকালই এখান থেকে সরাসরি বের হয়ে যাবো, এরপর ট্রেনিং শেষে সেখান থেকেই বাড়িতে রওনা দিবো। বুঝছিস?"
রিফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
"কেনো? তুই না বললি যে তোর তিনদিনের ট্রেনিং?"
আমি ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বলি,
"না মানে আমিও তিনদিনের টার্গেট নিয়েই এসেছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে কল দিয়ে বললো যে একদিনেরই নাকি ট্রেনিং হবে। তাই আর কি!"
রিফাত হয়তো বুঝতে পেরেছে কিছুটা হলেও যে আমি কোনো এক অজুহাতে ওর বাসা থেকে চলে যেতে চাচ্ছি। তবুও একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
"ঠিক আছে। সমস্যা নেই। কিন্তু এমনিতে থেকে যা কয়েকটা দিন।"
শেষ কথাটা বলার সময় আমার মনে হলো ওর গলাটা কেমন যেন আটকে এসেছে। আমিও আর ওকে বিপদে না ফেলে হাসিমুখে বলি,
"আরে না না! অফিসের কাজ ছেড়ে কি থাকা যায়? আবার যদি ঢাকাতে আসি তখন নাহয় দেখা যাবে।"
রিফাত এক চিলতে হাসি দিয়ে বলে,
"ঠিক আছে তাহলে তুই একটু বস আমি প্লেট নিয়ে আসি।"
এই বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো আমার বন্ধু। ওর কথা শুনে আমার মুখে হাসি ফুটানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এইমুহূর্তে।
একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছি দুইদিনের জন্য। ঢাকার শহরের হোটেল গুলো যে বেশ ব্যায়বহুল তা আগেই জানতাম, দুই রাত থাকার জন্যই আমাকে ব্যয় করতে হবে তিন হাজার টাকা আর খাওয়ার কথাতো বাদই দিলাম। হোটেল রুমের মধ্যে বসে আছি এমন সময় আমার স্ত্রী মিহি আমাকে কল দিলো। কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
"কেমন আছো? আর রিফাত ভাই ওনারা কেমন আছে? ভাবী ভালো আছেতো?"
মেয়েটির এতোগুলো প্রশ্ন শুনে আমি স্বাভাবিক কণ্ঠে বলি,
"হ্যাঁ সবাই ভালো আছে। আর ভাবীতো আজকে আমার জন্য অনেক কিছু রান্না করেছে। তার মতো অমায়িক মানুষ হয়ই না, বুঝছো?"
মিহি উৎফুল্ল স্বরে ওপাশ থেকে বলে,
"বলো কি! আমিও জানতাম রিফাত ভাইয়ের বউ ভালোই হবে। তুমি একটু ভাবীর কাছে ফোনটা দাও আমি একটু কথা বলি।"
আমার স্ত্রীর কথা শুনে মুহূর্তেই আমার হৃদপিন্ডটি ছ্যাঁত করে উঠলো। কোনোরকম নিজেকে আয়ত্তে এনে বলি,
"আরে এখন আমি একটু বাহিরে আছি। পরে নাহয় তোমার সাথে কথা বলিয়ে দিবো।"
মিহি আমার কথা শুনে আর এব্যাপারে কিছু বলেনি, টুকটাক ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে শেষমেশ ফোনটি রেখে দেয়।
আমি যদি এখন মিহিকে গতকাল রাতের কথাগুলো বলতাম তাহলে হয়তো ওর কষ্টের সীমা থাকতো না পাশাপাশি দুই একটা কথাও হয়তো আমাকে শুনিয়ে দিতো। কারণ একটা সময় যখন রিফাত ছাত্রাবস্থায় নিজের শূন্য পকেটে আমার মেসে মাসের পর মাস ফ্রি-তে থেকেছিল এবং খেয়েছিল সেটা মিহির অজানা নয়।
এরপর পার হয়েছে তিনবছর...
অফিস থেকে আমাকে শেষমেশ অনেক পত্র দরখাস্ত দেওয়ার পর ঢাকা শহরে ট্রান্সফার করলো। কারণ রিফাতের বাড়িতে সেই ঘটনার পর থেকে নিজের মধ্যে এক অজানা জেদ চলে এসেছিল যে যেভাবেই হোক ঢাকাতে ট্রান্সফার হবো। আমার স্ত্রী এখনো জানে না এই তোড়জোড়ের আসল কারণটা কি?
সেদিন হঠাৎই রিফাত আমাকে ফোন দেয়। বহুদিন পর ওর ফোন পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিলাম কারণ যত যাই হোক বন্ধুত্বের বন্ধন কি আর ভোলা যায়? টুকটাক খোঁজখবর নিয়ে হঠাৎই রিফাত বলে,
"বন্ধু তোর সাথে একটা কথা ছিল! আসলে আমার চাকরিটা চলে যাওয়ার পর গ্রামে এসে ব্যবসা করছি সেটাতো জানিসই। মূলত আমার শাশুড়ির অবস্থা খুবই খারাপ! ক্যান্সার ধরা পরেছে। ডাক্তার বলছে ঢাকা নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে, তাই আর কি...।"
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলি,
"সমস্যা কি? আমার বাসায় চলে আয়। আমার বাসার একরুম সবসময় খালি থাকে। মূলত মেহমান দের জন্যই একরুম এক্সট্রা দেখে ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম।"
রিফাত ইতঃস্তত ভঙ্গিতে বলে,
"সেটা নাহয় বুঝলাম কিন্তু ভাবীর আবার কোনো সমস্যা হবে নাতো? উনি যদি রাগ করে!"
আমি সামান্য হেসে বলি,
"আরে ব্যাটা কি বলিস! সেই তো মেহমানের কথা চিন্তা করে একরুম আমাকে বেশি দেখে বাসা ভাড়া নিতে বলছে। ওসব নিয়ে চিন্তা নেই চলে আয়। তোরা আসলে মিহি ঠিকই খুশি হবে। আর ঢাকাতে কেউ বেড়াতে আসে নাকি? প্রয়োজনের জন্যইতো আসে।"
রিফাত আমার কথা শুনে সাথে সাথে উৎফুল্ল স্বরে বলে,
"অনেক ধন্যবাদ বন্ধু। তুই না থাকলে আমার কোথাও বাসা ভাড়া নেওয়ারও উপায় ছিল না। এখন খুবই সংকটে আছিরে বন্ধু।"
রিফাতের স্ত্রী তিথির প্লেটে যখন আমার স্ত্রী বড় একটি রুই মাছের পিস দিতে যাবে তখনি তিথি লজ্জা পেয়ে বলে,
"আরে ভাবী কি করছেন? আপনাদের এখানে আশ্রয় পেয়েছি এটাই অনেক কিছু। এতো আয়োজনের কি দরকার ছিল? বলুনতো!"
মিহি মুচকি হেসে বলে,
"কি যে বলেন ভাবী! আপনার প্রশংসা আপনার মারুফ ভাই যে আমার কাছে কত করেছে তা কি আমি ভুলে গেছি নাকি? প্রতিবার ঢাকায় আসলে তো আপনাদের বাড়িতেই আসতো আগে। আর আপনি তার জন্য কত আপ্যায়ন করেছেন তা কিন্তু ভুলিনি। সেই হিসেবে এগুলোতো কিছুইনা।"
মিহির কথা শুনে তিথি আর রিফাত অবাক নয়নে মিহির দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ বাদেই দুজন আমার দিকে তাকালো। আমি হালকা রহস্যময় হাসি দিয়ে খাওয়ায় মনোযোগী হলাম। হয়তো ওরা ভাবছে জীবনে একবারই তো ওদের বাসায় গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরেছিলাম সেখানে কিনা মিহি বলছে উল্টো কথা? তাহলে কি আমি আসলেই মিহিকে ওদের ব্যপারে মিথ্যা বলেছি?
দুজনই খাবার অল্প অল্প খাচ্ছে আর লজ্জায় কিছুক্ষণ বাদে বাদেই আমার দিকে তাকাচ্ছে। সেটা আমি সরাসরি না দেখলেও ওদের তাকানোটা অনুভব করছি বেশ। কিছু বিষয়ের প্রতিশোধ হয়তো পরোক্ষভাবে দিলেও তার তীক্ষ্ণতা হয় অতুলনীয় যার দৃষ্টান্ত আমার সামনেই। ভালো স্ত্রী পেতেও হয়তো ভাগ্য লাগে যেরকম আমি এক সৌভাগ্যবান।
(সমাপ্ত)
Author: Misak_Al_Maruf
***ছবিতে বোয়াল মাছ।
ইনসাইড_দ্যা_ডোর
ইনসাইড_দ্যা_ডোর
অবশেষে দোতলার ভৌতিক বাসাটা ভাড়া হলো।
আগামী পরশু থেকে ভাড়াটিয়া উঠবে। -ভেবেছিলাম একদম ফাঁকা পড়ে থাকার থেকে মাস শেষে যা কিছু আসে তাতেই লাভ। কিন্তু ছেলেটা বেশ ভালো দামেই বাসাটা ভাড়া নিচ্ছে।
আতিক সাহেবের কথা শুনে সাহেরা বেগম মুখে একটু ফিকে হাসি টেনে বললো,
-ভাড়া তো কতো জনই নিলো। ১ সপ্তাহের বেশি তো কেউ ই টিকতে পারলো না। বাসায় ওঠার দু'দিন পরে তো ঠিক সেই ভুত ভুত বলে পালাবে,অযথা ঝামেলা টানার দরকারটা কি ছিলো শুনি?
সাহেরা বেগমের কথা শুনে একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে আতিক সাহেব বলে,
-না গো,এবার সেই ভুল আর করিনি। ছেলেটার নাম সোহান। তাকে শুরুতেই সবটা খুলে বলেছি, বুঝলে তো। আমার কথা শুনে ছেলেটা তো হো হো করে হেঁসে উঠেছে।আমাকে বলল, এই যুগে এসে ভুতের ভয়ে বাসা ছেড়ে পালানোর বিষয়টা সত্যিই অদ্ভুদ।ভুত বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই,যা আছে সবই মস্তিষ্কের ভুল ধারণা। উল্টো আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি কখনো নিজ চোখে কিছু দেখেছি কিনা। আমি না বলাতে বলে, নিজ চোখে না দেখে অন্যের কথা কেন বিশ্বাস করলেন?
ওর প্রশ্নটা শুনে মনে আসলো, আসলেই তো। আমি নিজে তো কখনো কিছু দেখিনি। তবে এতোগুলো মানুষের মুখের কথাকে মিথ্যা ভেবে বিষয়টা এড়িয়ে যাই কিভাবে বলো?
ছেলেটি আরও বললো, ভুত-প্রেতে সে বিশ্বাস করে না। আর যদি এমন কিছু থেকেও থাকে সেই ভুতকে নাজেহাল করে তাড়ানোর পদ্ধতিও নাকি তার জানা আছে। আমিও আর কথা বাড়াইনি।
ছেলেটা ডাক্তার, বউ নিয়ে থাকবে। শিক্ষিত একটা পরিবার আসছে, এতে মন্দ কি?
-তাহলে তো ভালোই হলো।সে যদি মানিয়ে চলতে পারে তাহলে আমাদের আর আপত্তি কি বরং আমাদের তো ভালোই হবে।
টেবিলে বসে দুপুরের খাবার খেতে খেতে কথা বলছিলো বাড়ির মালিক আতিক সাহেব ও তার স্ত্রী সাহেরা বেগম। দু'টো সন্তান নিয়ে তাদের ছোট পরিবার। দুই ছেলেই বিয়ে করে এমেরিকায় স্থায়ী হয়ে গেছে। বাংলাদেশে সাহেরা বেগম তার বোনের ছেলে সুমনকে নিয়ে বসবাস করেন।বোন মারা যাওয়ার পর থেকে সুমন বড় হয় সাহেরা বেগমের কাছেই। সুমনকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো। পড়ালেখা করে তাদের সন্তানের মতো সুমনও অনেক ভালো ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। কিন্তু সুমনের কিছু ব্যবহারে আশাহত হতে হয় তাদের। টাকা পয়সা, আদর ভালোবাসা কোনোকিছুর কমতি না থাকার পরেও একদম অধঃপতনে গিয়েছে সুমন। খারাপ ছেলেদের ভেতরে যত ধরণের বদঅভ্যাস থাকা প্রয়োজন সবকিছুই তার মাঝে বিদ্যমান। ভালো পথে আনার জন্য আতিক সাহেব কম চেষ্টাও করেননি কিন্তু ফলাফল শূন্য। তবুও তিনি তার চেষ্টায় বহাল। এই ছেলেকে নিয়ে আতিক সাহেবের চিন্তার শেষ নেই।
.
.
.
.
কথা হচ্ছিল আতিক সাহেবের বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটা বাসা নিয়ে। অনেকের অভিযোগ ওই বাসায় নাকি অলৌকিক কিছুর অস্তিত্ব আছে। ভুল করেও কেউ ওই বাসায় উঁকি মারার সাহসটুকুও করে না। ভাড়া কম দেখে কেউ কেউ বাসাটা ভাড়া নিলেও, ১ সপ্তাহের ভেতর সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এভাবে অনেক ভাড়াটিয়া এসেছে আবার চলেও গেছে।এরপরে প্রায় চার মাস ধরেই বাসাটা একদম খালি পড়ে ছিল। ভাড়া হওয়ার আশাও একদম বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন আতিক সাহেব। কিন্তু আজ সকালে হঠাৎ করেই বাসাটি ভাড়া হয়ে যাওয়ায় আতিক সাহেব বেজায় খুশি হন।
.
.
.
.
আজ সোমবার।
দ্বিতীয় তলার বাসাটিতে আজ সেই ডাক্তার ছেলেটার ওঠার কথা ছিলো। কিন্তু সারাদিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরেও তার কোনো খোঁজ পায় না আতিক সাহেব। অগত্যা নিজের থেকেই একটা কল করেন তিনি। ওপাশ থেকে সোহান নামক ছেলেটা জানায়, সবকিছু গোছাতে একটু সময় লাগছে তাদের।
বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটু রাত হতে পারে। বেশি রাত হলে দারোয়ানের কাছে চাবি দিয়ে রাখবে জানিয়ে আতিক সাহেব ফোনটা কেটে দেয়।
.
.
.
.
রাত বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট।
গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে পরে দারোয়ান।
গাড়ি থেকে নেমে আসতে দেখে সুদর্শন একজন যুবককে। দারোয়ান একটু এগিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, তিনি "ডাক্তার সোহান" কি না!
যুবকটি হ্যা-সূচক জবাব দিতেই দারোয়ান তড়িঘড়ি করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়, জিনিসপত্র সব নামিয়ে বাসায় উঠিয়ে দিতে। গাড়ির দিকে যেতেই সোহান দারোয়ানকে বাঁধা দিয়ে জানায়,সে একাই সবকিছু নিতে পারবে। দারোয়ানও কিছু না বলে বাড়ির চাবিটা দিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে।
.গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেছিলো সাহেরা বেগমেরও। বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে এসে গেটের দিকে তাকিয়ে ছিলো সে।
সাহেরা বেগম দেখতে পান, একটি ছেলে হাতে কিছু ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। তার পেছনে পেছনে হেঁটে যাচ্ছে বোরকা পড়া একজন মেয়ে। সাহেরা বেগম বুঝতে পারেন দোতলার ভাড়াটিয়ারা এসে গেছে।
ছেলেটা ব্যাগসহ তার স্ত্রীকে বাসায় রেখে আবারও গাড়ির কাছে ফিরে আসে। গাড়ি থেকে বড় বড় দু'টি পুতুুল বের করে। দেখতে একদমই মানুষের মতো। দেখে মনে হচ্ছে কোনো পুতুল রূপী মানুষ। এই পর্যন্ত সাহেরা বেগম সরাসরি কখনোই এতো বড় পুতুল দেখেননি।
চারতলা থেকেই বোঝা যাচ্ছে পুতুলের ভেতরের একটি ছেলে এবং অপরটি মেয়ে ।
দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে ঘুমে ঢুলতে দেখে সাহেরা বেগম বেশ রেগে যান। মনে মনে ঠিক করে নেন একবার সকাল হোক এই ঘুমের কারণে কাল আবারও খুব বকা দিতে হবে তাকে।
.
.
.
.
পরদিন সকাল।
সাহেরা বেগম, আতিক সাহেব ও সুমনকে চা দিয়ে তাদেরকে জানান, দোতলার ভাড়াটিয়ারা কাল রাতে এসে পড়েছে। আতিক সাহেব "ওহ আচ্ছা " বলে নিউজ পেপারে চোখ বুলাতে থাকেন।
সাহেরা বেগম আবারও নিজ থেকে বলেন,
-"নতুন সংসার বোধহয় বুঝলে তো!
আসবাবপত্র তেমন কিছুই দেখলাম না। শুধু দেখলাম বড় বড় কয়েকটি ব্যাগ এনেছে। আর বড় বড় দু'টো পুতুল। এতো বড় পুতুল যে, তুমি দেখলেও অবাক হতে । পুতুলগুলো কি সুন্দর! মনে হয় জীবন্ত কোনো মানুষ। তবে যাই হোক নতুন ভাড়াটিয়া আসলো একবার গিয়ে তাদের সাথে কথা বলা উচিৎ তাই না বলো?"
আতিক সাহেব নিউজ পেপার থেকে মুখ তুলে বললেন,
-"হ্যা তা তো অবশ্যই। কাল আসার পরে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা,সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে নিতে পারলো কিনা সে ব্যাপারে একটু খোঁজখবর তো নিতেই হয়। একটা কাজ করো কিছু নাস্তা নিয়ে বরং ওদের সাথে দেখা করে আসো।"
সাহেরা বেগম আতিক সাহেবের কথায় সম্মতি জানিয়ে উঠে রান্নাঘরে চলে যান।
.
.
.
.
প্রায় ১০ মিনিট ধরে দোতলার কলিংবেল বাজিয়ে চলেছে সাহেরা বেগম। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো ধরণের সাড়াশব্দ পায় না সে। এভাবে আরও কয়েকবার কলিংবেল প্রেস করতেই ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, -"কে?"
-"আমি চারতলা থেকে এসেছি। তোমাদের বাড়িওয়ালা আন্টি।"
সাহেরা বেগমের প্রতিউত্তরে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। তবে কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলে দেয় ২৮-৩০ বছর বয়সী একজন যুবক।
এসে সাহেরা বেগমকে সালাম জানিয়ে বলে,
সে "ডাক্তার সোহান"।
সাহেরা বেগম কুশল বিনিময় শেষে জিজ্ঞেস করেন এখানে থাকয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। সোহান না সূচক জবাব দিয়ে জানায় তাদের বাসাটা খুব পছন্দ হয়েছে। সাহেরা বেগম সোহানকে তার স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করলে সোহান জানায় সে এখন ঘুমাচ্ছে।
বেলা ১১ টা পর্যন্ত কেউ ঘুমাচ্ছে শুনে বেশ অবাক হয় সাহেরা বেগম। পরমুহূর্তে আবার ভাবে হয়ত সারারাত ধরে বাসার কাজে ব্যস্ত ছিলো তাই ক্লান্ত শরীরে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।
নিজের চিন্তাকে দীর্ঘ না করে সাহেরা বেগম সোহানকে তার স্ত্রীর নাম জিজ্ঞেস করেন।
ডাঃসোহান জানায় তার স্ত্রীর নাম "তাবিয়া"
সাহেরা বেগম আর কথা না বাড়িয়ে ডাঃ সোহানের দিকে নাস্তার প্লেট এগিয়ে দেন। সোহান সাহেরা বেগমের হাত থেকে প্লেটটি নিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দেয়।
.
.
.
.
বাসায় ঢুকে রাগে গজগজ করতে থাকে সাহেরা বেগম। আতিক সাহেব "কি হয়েছে?" জিজ্ঞেস করতেই সাহেরা বেগম বলে ওঠে,
-"শিক্ষিত মানুষ ঠিক আছে কিন্তু এক ফোঁটা সভ্যতাও কি তার ভেতরে নেই? দরজার সামনে গিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম তাদের কোনো সাড়াশব্দ নেই, দরজা খুললো বিশ মিনিট পর। দরজার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে কথা বলে গেল আমার সাথে। ভেতরে গিয়ে একবার বসতেও বলল না।
এমনকি প্লেটটি নিয়ে মুখের উপর দরজা আটকে দিলো। এটা কোন ধরণের ভদ্রতা বলো তো?"
আতিক সাহেব সাহেরা বেগমকে তেমন কিছুই বললেন না। শুধু বললেন, বাসা হয়ত অগোছালো নতুন উঠেছে তাই লজ্জায় তোমাকে ভেতরে নেয়নি।
.
.
.
.
.
এভাবে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন।
এরমাঝে ডাঃ সোহানের থেকে বাসা নিয়ে কোনো অভিযোগ শোনা যায়নি। সবার ধারণা হয়ত অলৌকিক শক্তির প্রভাব কেটে গেছে বাসা থেকে।
তবে আজ সকাল থেকে পুরো বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় লেগে আছে। তিনদিন ধরে সুমন গায়েব। বন্ধুদের বাসায় গিয়ে মাঝে মাঝেই সময় কাটায় সুমন তবে না জানিয়ে কখনো দু'দিনের বেশি বাড়ির বাইরে সময় কাটায় নি। এবার হঠাৎ তিনদিন ধরে লা-পাত্তা হওয়ায় চিন্তায় পড়ে যায় আতিক সাহেব ও সাহেরা বেগম দুজনেই। ইতিমধ্যে
থানায় একটা মিসিং ফাইলও করে এসেছেন আতিক সাহেব। মাঝেমধ্যে এভাবে না জানিয়ে কোথাও চলে যাওয়া সুমনের পুরোনো অভ্যাস। দুশ্চিন্তা হলেও তারা আশা রাখেন খুব শীঘ্রই সুমন ফিরে আসবে।
.
.
.
ডাঃ সোহান তাদের বাসায় ওঠার পরে কাগজপত্রের ফর্মালিটিগুলো সারা হয়নি। সাহেরা বেগম এ উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার সোহানের বাসায় গেলেও ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
আজ হঠাৎ দরজা খোলা পেয়ে কয়েকবার কলিংবেল প্রেস করে সাহেরা বেগম।
কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। ওড়না দিয়ে খুব সুন্দর করে মাথা ঢেকে রাখা। শুধু মুখ আর কিছু দেখা যাচ্ছে না তার। বেশ মায়াবী চেহারা মেয়েটির। তাকে দেখে সাহেরা বেগম বুঝতে পারে সে-ই ডাঃ সোহানের স্ত্রী "তাবিয়া"।
তাবিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সাহেরা বেগম দেখতে পান, তাবিয়ার চোখ দু'টি পানিতে ছলছল করছে। লাল টকটকে ঠোঁটদুটো অনবরত কাঁপছে। মনে হচ্ছে তাবিয়া চোখের ভাষায় অনেক কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
মেয়েটাকে দেখে অনেক মায়া হয় সাহেরা বেগমের। সাথে তার মনে জাগে কৌতুহলও। সাহেরা বেগম কিছু একটা বলতে যাবেন এর মধ্যেই ভেতর থেকে ডাঃ সোহানের ডাক ভেসে আসে। সোহানের গলা শুনেই তাবিয়া কিছুটা কেঁপে ওঠে। সাহেরা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।
পুরো বিষয়টাই সাহেরা বেগমের বেশ অদ্ভুত লাগে। নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন রাখে,
" তাবিয়া কি বিশেষ কিছু বোঝাতে চেয়েছিলো আমাকে? যদি তাই হয় তাহলে কি বলতে চায় সে যা সরাসরি মুখে বলতে পারছিলো না?"
.
.
.
.
চলবে...?
#পর্ব_১
ভয়ংকর স্কুল রাস্তা যেখানে পদে পদে মরন ঝুঁকি
ভয়ংকর স্কুল রাস্তা যেখানে পদে পদে মরন ঝুঁকি
স্কুলে যাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁ*কি নিয়ে মই বেয়ে ৮০০ মিটার খাড়া পাহাড়ের চূড়া হতে ওঠা-নামা করা লাগে যে শিশুদের!
ছোটবেলায় নিজেদের বাবার কাছ থেকে মাইলের পর মাইল সাইকেল চালিয়ে, হেঁটে কিংবা নদী পাড় হয়ে স্কুলে যাওয়ার গল্প শোনেনি এমন লোক বোধহয় কমই আছে৷ তাদের গল্পের সত্যটা কতটুকু সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে৷ কিন্তু চীনের সীচুয়ান প্রদেশের আতুলের নামে একটি গ্রামে, আক্ষরিক অর্থেই স্কুলে হতে বাসায় ফেরার জন্য তাদের ৮০০ মিটার খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় মই বেয়ে ওঠা লাগা, আবার স্কুলে যেতে চাইলে এই মই বেয়ে নামা লাগে নিচে। এই ওপরে ওঠতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা৷ যার কারণে এই গ্রামের শিক্ষার্থীরা মাসে মাত্র ২ বার স্কুল থেকে বাসায় ফেরে।
মাত্র ৪০০ লোকের বাস ওই গ্রামটিতে, এই ছোট্ট গ্রামই ২০১৬ সালে সবার নজর কেড়েছিল যখন ছবিগুলো বেইজিং নিউজে প্রকাশিত হয়, যেখানে ১৫ জন স্কুল শিক্ষার্থীকে মই বেয়ে ওপরে উঠতে দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সর্বনিম্নের বয়স ছিল মাত্র ৬! অবশ্য এই ছবি প্রকাশের পর পাহাড়ের চূড়ায় স্কুল তৈরি সম্ভব না হলেও কাঠের তৈরি পুরানো মইগুলো সরিয়ে নতুন বড় ধরণের মই লাগিয়েছে সেখানকার প্রশাসন।
আপনি কি টাইম ট্রাভেল কে বিশ্বাস করেন!
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনি কি টাইম ট্রাভেল কে বিশ্বাস করেন!
অথবা ভুতকে বিশ্বাস করেন?
আজ আমি আপনাদের এমন একটি, সত্য ঘটনা শুনাবো যা শুনে হয় আপনাকে টাইম ট্রাভেল কে বিশ্বাস করতে হবে, নয়তো ভুতকে!
বিশ্বাস হচ্ছেনা!!!তাহলে মনযোগ দিয়ে পরুন।
কাহিনীটির শুরু হয়েছিল 1911 সালে ইটালির রোম শহরে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর দিকে ইতালির রেলওয়ে কোম্পানির ব্যাপক প্রসার ঘটে।
১৯১১ সালে ইতালির রেলওয়ে কমপানি zanetti নতুন ধরনের, এক ট্রেন তৈরি করে, শুধু মাত্র লোকাল যাএী পরিবহনের জন্য।
১৪ই জুন দুপুরে, প্রায় একশ জন যাত্রী ও ছয় জন ক্রু নিয়ে zanetti র তৈরি, নতুন ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। গন্তব্যটাও খুব একটা বেশিদুর না, কাছেরই একটি রেলস্টেশনে।
ট্রেনের যাত্রীরা যাএা পথের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করছিল , এবং সবাই গল্প গুজবে আত্তহারা হয়ে ছিল।
গন্তব্যে পৌছানোর জন্য, ট্রেনটিকে লম্বার্ডি পর্বতের বুক-চিরে তৈরি করা ১ কিলোমিটার টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হতো।
ট্রেনটির গতিও ছিল খুবই সামান্য। ট্রেনটি ছাড়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই লম্বার্ডি র্পবতের টানেলের কাছাকাছি চলে আসে।
ট্রেনটি যথাযথ গতিতেই টানেল এক মুখ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে!!!
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অন্য মুখ ট্রেনটি আর বের হয়না!
প্রথমে স্থানীরা মনে করে, হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে টানেলের ভেতরেই থেমে আছে ট্রেনটি।
তখন তারা পুলিশের সহায়তায় টানেলের ভেতর প্রবেশ করেন।
তারা যত টানেলের ভেতরে প্রবেশ করে ততই তাদের মনে জিজ্ঞাসা এবং ভয় বাড়তে থাকে।
এগিয়ে যেতে যেতে তারা টানেলের অন্য মুখ দিয়ে বাইরে চলে আসে কিন্তু ট্রেনটি কোন অস্তিত্বই আর চোখে পরেনা।
এই ঘটনায় স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায়, এত বড় একটি ট্রেন টানেলের মধ্য থেকে কোথায় গায়েব হয়ে গেল এই ভাবে। কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
কিছু সময় পর রোমান রেলওয়ে অফিসে খুব আহত অবস্থায় ২ জন মানুষ আসে।
তারা জানায়, টানেলে ঢোকার আগেই ট্রেন থেকে তারা লাফ দিয়েছিল ।
কেননা তাদের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল, তাদের শরীর ঘামতে শুরু করেছিল, হার্টবিট খুব বেড়ে গিয়েছিল । সহ্য করতে না পেরে ট্রেন থেকে লাফ দেন তারা।
তবে লাফ দেওয়ার অাগে টানেলের মূখে সাদা ধোয়ার মত কিছু একটা দেখেছেন তারা।
এই দুই যাত্রীর কথাগুলো রহস্যময় এই ঘটনাকে যেন আরও রহস্যজনক করে তুলে।
দেশের সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই হতভহমব হয়ে যায়।কিভাবে এত বড় একটি ট্রেন টানেলের ভেতর থেকে 106 জন যাএি নিয়ে এভাবে উধাও হয়ে যেতে পারে।
এই ঘটনার পূনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য টানেলটির দুই মুখ দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কালক্রমে ঘটনাটি ধামাচাপা পরে যায়। মানুষও ধীরে ধীরে ভুলে যায় ।
কিন্তু ১৯২৬ সালে হারিয়ে যাওয়াদের মধ্যে ১জন যাত্রীর আত্মীয় পুরনো নথিপত্র ঘেটে এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করলেন যা শুনে সবাই চমকে যায়।
এই রিপোর্টে বলা হয়, ১৮৪৫ সালে মেক্সিকোতে পাগলাখানায় একইসঙ্গে একইদিনে ১০৪ জন রোগি ভর্তি হয়। এই ১০৪ কারা এবং কোন জায়গা থেকে এসেছে তা কেউ জানতো না।
আরও অবাক করার বিষয় ছিল, কিছু দিন পর জানা যায় ১০৪ জন মানুষই ইতালিয়ান।
তারা বলেছিলেন তারা রোম থেকে এসেছে। এই মানুষগুলোর দেয়া তথ্য এবং ১৯১১ সালের ২ জন লাফ দেওয়া যাত্রীর তথ্য যেন একদম মিলে যায়।
কিন্তু অবাক করার বিষয়, ১৯১১ সালে হারিয়ে যাওয়া যাত্রীরা ১৮৪৫ সালে একটি পাগলাগারদে কিভাবে ভর্তি হতে পারে?
আরেকটি বিষয়, সব যাত্রী বলছিল তারা রোম থেকে এসেছে ট্রেনে করে। কিন্তু রোম থেকে মেক্সিকোর দূরত্ব প্রায় ১০ হাজার কিমি! এই দুটি স্থানের মধ্যে রয়েছে বিশাল আটলান্টিক মহাসাগর ও বেশ কয়েকটি সাগর!
কিভাবে একটি ট্রেন পানির মধ্য দিয়ে রেলওয়ে ট্র্যাক ছাড়াওই এত রাস্তা যেতে পারে?
যাত্রীদের কথা যাচাই করার জন্য রোম থেকে মেক্সিকো আসা জাহাজগুলোর প্যাসেঞ্জার লিস্ট চেক করা হয়।
কিন্তু সেখানে কোন যাত্রীর নাম নথিপত্রে ছিল না। তাহলে ঐ পাগলাগারদে একই ভাষাই কথা বলা, একই দিনে ভর্তি হওয়া, একই দেশের ১০৪ জন মানুষ এলো কিভাবে?
এই ইতালীয় মানুষগুলোর মধ্যে একজনের কাছে একটি টোবাকো বক্স পাওয়া যায়। যার ওপর কোম্পানির নামের সঙ্গে ১৯০৭ সাল লেখা ছিল।
এই সব বিষয়গুলো পুরো বিশ্বকে গোলক ধাধায় ফেলে দেয়।
পরবর্তীকালে আরও একটি রহস্যে যোগ হয় এই রহস্য গুলোর সাথে।
পিয়োটার নামক এক স্টেশনের সিগন্যালম্যান, অদৃশ্য হওয়া ট্রেনটিকে দেখেছে বলে দাবি করে।
তিনি জানিয়েছিলেন যে, এক রাতে তিনি ডিউটিতে ছিলেন এবং হঠাৎ একটি ট্রেন দেখেন যা তার সময়সূচীতে ছিল না।
ট্রেনটি ট্র্যাক ছাড়াই গ্যাসফোর্ট মাউন্টেনের দিকে যাচ্ছিল।
এছাড়াও আরও কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায় জানা গেছে তারা যে ট্রেনটি দেখেছে তা হঠাৎ তাদের সামনে এসেছিল, আবার গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনটিতে ৩টি কমপার্টমেন্ট ছিল। যা একটি লম্বা লোহার দণ্ড দিয়ে একে অপরের সঙ্গে লাগানো ছিল।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, আলাদা আলাদা জায়গায় দেখতে পাওয়া ট্রেনটি একই ছিল!
এটা একটা ভূতুড়ে ঘটনা না-কি ট্রেনটি টাইমলুপে আটকে গিয়ে টাইম ট্রাভেল করছে?
আসলেই কি ট্রেনটি এখনো ভ্রমণ করে চলেছে? আমরা আজও জানিনা টাইম ট্রভেল বাস্তবে সম্ভব কিনা?
যদি টাইম ট্রভেল সম্ভব না হয়! তাহলে এত বড় একটি ট্রেনটি কিভাবে টানেলের ভিতর থেকে ভ্যানিশ হয়ে গেল।
আর যদি টাইম ট্রভেল হয়, তাহলে টানেলের মধ্যেই কেন?
পাগলাগারদে , একই দিনে ভর্তি হওয়া, একই দেশের ১০৪ জন মানুষ কিভাবে এল?
এটা এমন এক রহস্যময় সত্য ঘটনা যার কোন উত্তর আজ র্পযন্ত কারো কাছে নেই !
ইনভেস্টিগেশন মাইন্ট নিয়ে একটু চিন্তা করে বলুন তো আসলে কি হতে পারে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এই ট্রেনটির আসল কাহিনী।
আপনার ইনভেস্টিগেশন মাইন্ট কি বলে তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবার কথা হবে নতুন কোন গল্পে, নতুন কোন রহস্যে নিয়ে। তবে কথা হবে তখনি যখন আপনাদের অনুপেরনা আমাকে নতুন কোন লিখাতে উৎসাহিত করবে।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন
ভয়ংকর রাত
ভয়ংকর রাত
তখন গরমকাল চলছে। মামাতো ভাই খুলনাতে থাকে। ভাবি প্রায় সময়ই ফোনে একেবারে কানটা ঝালাফালা করে দেয় খুলনাই আসার জন্য। পড়াশুনা চলাকালীন অনার্স একসাথেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করি। মামাতো ভাই অন্য ডিপার্টমেন্ট এ থাকলেও আমার এই বান্ধবিটার সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে চার বছর। পরে ফলশ্রুতিতে বিয়ে। এখন চাকুরীর সুবাদে দুজনেই খুলনাতে। অবশ্য আমি এখনো বিয়ে করিনি। তবে অতি শীঘ্রই হয়তো ফাঁন্দে পড়তে হতে পারে।
মামাতো ভাই আর বান্ধবী ভাবীর প্যান প্যানানির জন্য অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিলাম। ফোনে ওদেরকে বললাম আমি আগামিকালই খুলনা আসছি। যাক প্লান মত সব ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিলাম। ভাবলাম রাতেই রওনা হবো। কারন একেতো গরম কাল তার উপর দিনের বেলাতে প্রখর রোদ। ড্রাইভারকে ঠিকঠাক ভাবে বলে দিলাম, আমি আজ রাতেই খুলনা রওনা হচ্ছি। সোন্ধাই খাবার খাওয়ার পর মা আমাকে যথারিতী সাবধানতার উপদেশ বানী দিতে লাগলো। সাথে একটা মাদুলীও দিল। আমিতো ওটা দেখে অবাক হয়ে গেছে। মা, তুমিনা সেই আগের মানুষই রয়ে গেলে। এসব তাবিজ কবুজকে কি কেও এখন বিশ্বাস করে। মায়ের সোজা জবাব কেও না বিশ্বাস করুক আমি করি। তুই এটা সাথে করে খুলনা নিয়ে যাবি। কি আর করা যথারিতী মায়ের হুকুম মেনে আমি আর আমার ড্রাইভার কাদের গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। ঘড়িতে রাত নয়টা মত বাঁজে। ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে বেশ খানিকটা দুরে চলে এসেছি। এমনিতেই ভরা পূনির্মা রাত তার উপর এই লং ড্রাইভ, বেশ রোমান্টিক করে দিচ্ছে বটে। ড্রাইভারের পাশের সিটেই আমি বসে। পুরো গাড়ীতে আমি আর ড্রাইভার কাদের ছাড়া কেও নাই। মাঝে মাঝে কাদেরের সাথে কথা হচ্ছে আর একশো থেকে একশো বিশ বেগে ছুটে চলেছে গাড়ি। কাদের কিছুক্ষন পর একটি গানের সিডি বের করে বাজাতে লাগলো। এমনি সময় ফোনটা বেজে উঠলো। ছোট আপু ফোন করেছে। হ্যালো জুথি বল... ভাইয়া তোরা কতদূর এখন, একা যেতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো? আমার জবাব, আরে না। টেনশন নিসনা, পৌছে ফোন দেব। আর বাবাকে একটু বুঝিয়ে বলিস। রাখি। ফোনটা রেখে দিলাম। ফোনটা রাখতে রাখতেই জীবন নিয়ে কেমন যেন বিচিত্র অনুভূতি হতে লাগলো। ছুটে চলা জীবনের গাড়ীর শো শো শব্দে নচিকেতার গানটার মত মনে হল- রাত বলে যায় যায়, ডাক দিয়ে যায়। চোঁখের পাতাই যেন কত কিছুই ভেসে উঠছে। শো শো করে ছুটে চলছে গাড়ী, আর জসনা ছড়াচ্ছে চাঁদ। রাত এগারোটা মত বাজতে বাজতেই কাদের বলে উঠলো- স্যার আমরা এখন ফেরী পার হবো। টাকা পয়সার হিসাব চুকিয়ে দিয়েই কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা ফেরীতে উঠলাম। কিছুসময় পরে ফেরীটা গাড়ীতে ভরলে আসতে আসতে টার্ন করলো। তারপর এক সময় মাঝ নদীতে। জসনা ভরা চাঁদনী রাতে এই নদীর পানি যেন অপরুপ রুপের শোভা ছড়াতে লাগলো। কাদের বলল স্যার দেখছেন কত সুন্দর লাগছে চাঁদ আর নদীর পানির ঢেও গুলোকে। আমরা ফেরী পার হয়ে গেছি। আবারো হায় ওয়েতে ছুটতে শুরু করেছে আমাদের গাড়ী। কিছু দুর পর পর একটি দুটি গাড়ীর হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। আমার চোঁখটা কেমন অবশ অবশ লাগছে। গাড়ীর ছিটেই হেলান দিলাম চোখ বুঝে। কিছুদুর যেয়েই হঠাত্ করেই কাদের গাড়ীর ব্রেকটা এমন ভাবে ধরলো, যেন পুরো গাড়ীটাই উল্টে পড়ে যাবার মত অবস্থা। এই কি হৈছে কাদের, এত জরে কি গাড়ীর ব্রেক ধরে কেও। কাদেরের জবার স্যার আমার দোষনা, ওনার জন্যই সব কিছু। এবার আমি আস্তে আস্তে গাড়ীর সামনে তাকিয়ে দেখি একটি বিশ থেকে বাইশ বছরের মেয়ে একটা বাচ্চা কোলে করে দাড়িয়ে আছে। ঘড়িতে রাত একটা। মেয়েটি সাদা শাড়ী পরে আছে। তার আঁচলের এক অংশ মাটির সাথে গড়াগড়ি খাচ্ছে। চুলগুলো এলোমেলো আর কান্না ভেজা চোঁখ। আমি গাড়ির দরজাটা খুলে নিচে নেমে বললাম- কি ব্যাপার, আপনি হঠাত্ করে একটা বাচ্চা কোলে করে আমার গাড়ির সামনে আসলেন কেন? মেয়েটি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো স্যার আমাকে বাঁচান। আমার স্বামী নয়তো আমাকে আর আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি কোন মতে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। সামনেই আমার বাবার বাড়ী। আপনি দয়া করে আমাকে একটু আপনার গাড়ীতে নিয়ে চলুন। আমি বললাম, দেখুন আপনি পথ থেকে সরে দাড়ান। আমি আপনাকে গাড়ীতে নিতে পারবোনা। এই কথা বলার সাথে সাথে মেয়েটি তার এক হাতে বাচ্চাটিকে বুকে নিয়ে আর এক হাতে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। কাদের ওপাশ থেকে বলল- স্যার আমাদের গাড়ির পিছনের ছিটতো খালি পড়ে আছে। আমরা না হয় এই বিপদ থেকে একটু ওকে সাহায্য করি। আর সামনেই তো ওর বাবার বাড়ী। আমরা ওখানেই ওকে নামিয়ে দেবো। কাদেরের এই কথা শুনে মেয়েটিকে গাড়িতে উঠতে বললাম। মেয়েটি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে পিছনের ছিটে উঠে বসলো। আমাদের গাড়ী কিছুক্ষন চলতেই থাকলো। এর মাঝে একবারো পিছন ফিরে তাকানো হয়নি। হঠাত্ করেই মনে হলো মেয়েটিতো কিছুদুর পরেই নামতে চেয়েছিল। আমি গাড়ির মিররের দিকে চেয়ে দেখার চেষ্টা করলাম মেয়েটির কি অবস্থা দেখার জন্য। কিন্তু আয়নার ভিতরেতো কোন কিছুই দেখা যায়না। আমি একটু ভালো ভাবে আয়নার দিকে চোখ দিলাম। দেখলাম দু টো লাল চোঁখ দেখা যায়। কিছুক্ষন পর দেখি মেয়েটি তার কোলের বাচ্চাটাকে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ধরে আছে। আমি ঘামতে শুরু করেছি। এবার দেখি মেয়েটি বাচ্চাটির দু পা দুটি হাত দিয়ে ধরে টেনে ছিড়তে লাগলো। মেয়েটির লাল চোঁখ আর অদ্ভূত চাওনি কি যে ভয়ংকর, বলে বোঝানো যাবেনা। কাদের তার আপন মনে ড্রাইভ করে চলে যাচ্ছে। ও কি ভয়ংকর। বাচ্চাটির মাথার দিকটার মুখের মাংসগুলো খেতে শুরু করেছে মেয়েটি। মুখে রক্তের লালা ঝরছে। আমি যে আয়নাতে এটি দেখছি মেয়েটি এখনো সেটি খেয়াল করেনি। ভাবতে থাকলাম কাদের যদি এখন এই দৃশ্য দেখে তাহলে একটা অঘটন ঘটে যাবে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা। এবার আমি আয়নার দিকে তাকাই। হঠাত্ করেই আয়নাটির ভিতরে তার লাল চোঁখে চোখ পড়ে যায়। বিভস্য রক্তের লালা জড়ানো চেহারা নিয়ে সে আমার দিকে তাকায়। পুরুষ কন্ঠে উঠে পিছনে তাকাবি না।কিছুক্ষণ পর মেয়েটি বাতাসে মিলে যায়।
মানুষ খেকো দানব
মানুষ খেকো দানব
এস.এস.সি পরিক্ষা শেষ। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না? একদিন আম্মা বলল চল সইয়ের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি, আম্মা, বদরুল, হাদীমামা সবাই মিলে কিশোরগন্জের পাকুন্দিয়া আম্মার সইয়ের বাড়ী বেড়াতে গেলাম। হৈ হৈ রৈ রৈ করে দিনগুলো খুব ভালই কাটছে। এর মাঝে একদিন ঐ এলাকায় মাইকে প্রচার হচ্ছে যাত্রা হবে।আমরা খুবই উৎফুল্ল। রাত্রে আমি, মামা, নয়ন ভাই, স্বপন, শরিফ, আরও তিনজন মিলে রওনা হলাম। মোটামুটি তিন কি.মি. রাস্তা। তার মাঝে নাকি আবার নদী পার হইতে হয়।
প্রচন্ড শীত। খোলা গলায় গান ছেড়ে নদীর পাড় দিয়ে চলছি। পাশের ঘন কাশবনের ফাক দিয়ে মাঝে মাঝে একজোড়া...দুই জোড়া চোখ এসে উকি দেয়। উকি দিয়েই শেয়াল গুলো পাশের ঝোপে হারিয়ে যায়। মামা বলল শেয়ালেরা রাত্রে নদীর পাড়ে আসে কাকড়া খাওয়ার জন্য।
আমরা মূল নদীরঘাটে এসে পৌছালাম। দেখি মাঝি নাই কিন্তু নৌকা আছে। আমরা মাঝিকে ডাকাডাকি করতে লাগলে কিছুক্ষণ পর মাঝিকে দেখলাম কাশবন থেকে বেড়িয়ে আসল। কিছুটা অপৃকতস্থ কি লেগেছিল? মনে নাই। নদী পার হলাম। আরও এক কিলোমিটার।
এবার কিন্তু সোজা কাশবনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। ছোট একটা রাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা কাশবনই ছিল। মানুষ হাটতে হাটতে কিছুটা রাস্তা হয়েছে। হালকা চাদনী। দুইধারের কাশের জন্য দু্ইপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সামনে আর পিছনে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সামনে আর পিছনের দুইপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কেননা চাদের আলো এতনিচে এসে পৌছাচ্ছেনা। আমরা সবাই হাটছি তো হাটছিই। কুয়াশা পরে দুইপাশের কাশগুলো কিছুটা নুয়ে পড়েছে। ফলে হাটার সময় আমাদের মুখে এসে লাগছে। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।
অনেকক্ষণ যাবৎ আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে কিছুক্ষণ পর পরই কাশবনের ভিতর একটা শব্দ হচ্ছে। শেষবার যখন শব্দটা শুনলাম তখন আমার মনে হলো কিছু একটা আমাদের সাথে সাথে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরপর শব্দটা শুনিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে বুঝলাম না। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর একই শব্দটা শোনা যাচ্ছে। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে করে সামনে যাওয়ার যে শব্দটা ঠিক সেই রকম। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।তবে কারও কাছে কিছু বললাম না।
সোজা সামনে হাটছি।
থেকে থেকে শব্দটা আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। একটা জিনিস খুব অদ্ভুত লাগছিল যে সবাই কেমন জানি নির্বিকার, কেউ কি কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তাহলে আমি কি কোন হ্যালুসেশানে আছি। মানুষের চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। আমি আর মামাছাড়া আর বাকি সবাই দেখি দৌড় দিল। আমরাও পিছনে পিছনে দৌড় লাগালাম।
মোটামুটি সামনেই বসলাম। সবাই চিৎকার-চেচামেচি করছে। দুইঘন্টা.........। এরমাঝে আয়োজকদের একজন এসে বলে গেল চুপ করার জন্য এখনি নাকি যাত্রা শুরু হবে। ৫-১০ সেকেন্ট চুপ ছিল আবার চিল্লা-চিল্লি। এবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধ। সবাই চুপ।
নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। নাচ শুরু হবে মনে হচ্ছে।সে কি নাচ........নাচের তালে তালে দর্শকরা সবাই উন্মাতাল। মামার দিকে তাকিয়ে দেখি বসে বসে লাফাচ্ছে। মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা পেল। কেউ কেউ টাকাও ছুড়ে মারছে। নৃত্যশিল্পী টাকা কুড়িয়ে ব্লাউজের ফাক দিয়ে বুকে রাখছে আর গা থেকে ধীরে ধীরে কাপড় খুলে ফেলছে। মামাকে দেখি বসা থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাফাচ্ছে। এদিকে দর্শক সারি থেকে কে জানি কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে নৃত্যশিল্পীর গায়ে মারল। শিল্পী কিছুটা বিব্রত বোঝাই যাচ্ছে।
আয়োজককারীদের মধ্য থেকে একজন এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। অহেতুক জামেলা কার সহ্য হয়? কেউ একজন ঐ আয়োজককারীর গায়ে জুতা ছুড়ে মারল। সেচ্ছাসেবক দলের আট-দশজন মিলে একটা লোককে সনাক্ত করে মাইর শুরু করল। সাথে সাথে দর্শকরাও ঝাপিয়ে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই হাজার হাজার মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। শরীফ, স্বপন বলল মামা দৌড় দেন....বিরাট মাইর লাগব.......এই এলাকা খুব খারাপ।
আমরা দৌড় লাগালাম।
শরীফ, স্বপনরা সামনে দিয়া আমরা পিছনে। দৌড়াচ্ছিতো... দৌড়াচ্ছিতো...। পিছন দিয়া ধর ধর....। জইল্যারে ছাড়িসনা.........মজিত্যা কই? এরকম হাজারও চিৎকার কানে ভেসে আসছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাজারও মানুষ দ্বিক-বেদ্বিক হয়ে দৌড়াচ্ছে। আমরা তখন রাস্তাছেড়ে কাশবনের ভিতর দিয়া হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছি। মামার জুতা ছিড়ে গেছে। বেচারা ঐ জায়গায় বসে জুতার জন্য শোক করা শুরু করল। মামা আবার ভীষন কৃপণতো। আমরা মামাকে ধরে টেনে হিচড়ে ভিতরে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে ধর ধর আওয়াজটাও স্তিমিত হয়ে আসছে।
আমরা নদীরপাড়ে এসে দাড়ালাম। হালকা চাদনি। ঘাটে কেউ নেই। সহজেয় বুঝতে পারলাম ভয়ে কেউ এদিকটায় আসেনি। শরিফ বলল এখানে দাড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোন ভাবেই নদীপাড় হতে হবে। আমি আবার সাতার জানিনা। মামা বলল ভাগ্নে তুমি আমার কাদে উঠ। আমি রাজি হলামনা। আমি সারাজীবন সব জায়গায় মাতব্বরি করতাম শুধু পানি ছাড়া। কেননা হাজার চেষ্টা করেও যে সাতারটা শিকতে পারলামনা। আমার সবসময় ভয় বেশী পানিতে গেলে নিচ দিয়ে যদি কেউ টান দেয়। সবাই আমাকে অনেক বুঝানোর পরও রাজি হলাম না। সবাই নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। একটা অজানা আতংক সবার ভিতরে কাজ করছে।
আল্লাহু... আল্লাহু... । সবাই একটু ছড়ানো-ছিটানো থাকলেও দেখলাম মুহুর্ত্তের মাঝে একসাথে জড়ো হয়ে গেল। শব্দটার উৎপত্তি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মাঝে শুনলাম 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু....। কাশবনের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সে দিকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা কাশবনের উপরদিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। আলোর তীব্রতা এবং শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলছে।
সবাই একদৃষ্টিতে ঐ দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি দুইজন মানুষ ঐ কাশবনের পথ দিয়ে বের হয়ে আসছে। দুইজনের হাতে দুইটি হারিকেন। পিছনে চারজনে কাদে করে একটি খাটিয়া নিয়ে আসলো। সাদা কাপড়ে ঢাকা। বুঝলাম কোন লাশ নিয়ে এসেছে। তার পিছনে আরও দুইজন হারিকেন হাতে। অবাক হয়ে গেলাম।
আসসালামু ওয়ালাইকুম। সবাই সালামের জবাব দিলাম।সবার চোখে-মুখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। আমি একটু আগ বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার বলুনতো। সবচেয়ে বৃদ্ধ যে লোকটা সে বলল "মৃত ব্যাক্তিটি হলো এই এলাকার জামাই। শশুর বাড়ীতে এসেছিল। সাপের কামড়ে সন্ধায় মৃত্যু হয়েছে। এখন ঐ পাড়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য।" সবার জড়তা মনে হয় একটু কাটল।
-বাবা নৌকা নাই
-না চাচা দেখি না তো
-ঠিক আছে তাহলে আপনারা এইখানে লাশের পাশে দাড়ান আমরা গিয়ে নৌকা নিয়ে আসছি।
এইটা কি কয়? মাথাটা আবার ঝিনঝিন করে উঠল। একটু সন্দেহও লাগছিল। শেষে আমি বললাম আপনারা চারজন এবং আমর চারজন মিলে গিয়ে নৌকা নিয়ে আসব। আর বাকি সবাই এখানে থাকুক।চাচা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারল। চাচার মুখে যে হাসিটা দেখলাম সেই হাসির রহস্য হাজার রকমের হতে পারে।
আমরা আটজন মিলে রওনা হলাম। নদীর পাড়ে ধরে হাটছি। সাথে দুইটি হারিকেন। চাচা মনে হয় মাঝির বাড়ি চিনে।সেই দেখলাম চিনিয়ে চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা জায়গায় এসে চাচা থামল। টর্চলাইট মেরে দেখলাম ঘাটে ঐ বিশাল নৌকাটা বাধা আছে। জায়গাটা অনেক অন্ধকার। নদীর পাড়ের উপরে বাড়ি ঘরও আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুপুরী। কিছুটা ভয় ভয় লাগছে। একটা প্যাচা উড়ে গেল।পানিতে কিছু পড়ার শব্দ। ঐ হাইল্যা... হাইল্যারে........। বুঝতে পারলাম মাঝির নাম হালিম। কোন সারাশব্দ নাই। চাচা রাগে বলতে লাগল সবাই কি মইরা ভূত হয়ে গেছে। শেষে আমরাই নৌকা নিয়ে আসলাম।
অনেক বড় নৌকা। নৌকার ছাদ নেই। উপরে কাঠ দিয়ে মেঝে করা হয়েছে। তবে মাঝখানে চার হাতের মত জায়গা ফাকা। পানি সেচের সুবিধার জন্য এটা করা হয়। আমরা এই ফাকের এক পাশে বসলাম। অন্য পাশে ওরা। আমি নৌকার শেষ মাথায় বসলাম। নৌকা যখন ছাড়বে, ঠিক তখনি কাশবনের ভিতর থেকে একটা আওয়াজ আসল।
-বাবারা আমারে একটু নিয়া যাও।
টর্চ লাইট মেরে দেখি এক বৃদ্ধলোক। ভাবলাম এতরাত্রে আমরা নিয়া না গেলে বেচারা কিভাবে পার হবে? তাই আমিই সবাইকে অনুরোধ করলাম নেওয়ার জন্য। নৌকাটি ভাসিয়ে লোকটি লাফ দিয়ে নৌকায় উঠল। নৌকাটি দোলনার মত দোল খেতে লাগল। আমার কাছে মনে হলো সবাই নৌকায় উঠার পর নৌকাটি যতটুকু ডুবল ঐ লোকটি উঠার পর আরও বেশী ডুবল। লোকটি লাশের ঠিক পায়ের কাছে বসল। নৌকা চলতে লাগল।
খুব বেশী বড় নদী না। কিছুটা স্রোত আছে। মনের ভিতর অজানা আশংকটা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করছি ততই মনে পড়ছে। এই হালকা চাদনী রাতে কাশবনের উপরে কুয়াশার ধোয়া যে মায়াবী জাল সৃষ্টি করেছে তা আলিফ লায়লার কথা মনে করিয়ে দিল। ভয় কাটানোর জন্য মনে মনে গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম। জোরকরেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। দূরে ভেসে যাওয়া কলাগাছরুপী লাশগুলোকে একমনে দেখছিলাম।
হঠাৎ যে নৌকা চালাচ্ছিল তার বিকট চিৎকার। কেউ একজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ। আমি ঘুরে তাকাতে তাকাতেই সমস্ত নৌকাটা দুলে উঠল যেন কোন নীলদড়িয়ায় নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়েছে। সবাই লাফিয়ে পানিতে পড়ছে। মামা চিৎকার করে পানিতে লাফ দেওয়ার জন্য বলছে। আমি উঠে দাড়ালাম। নৌকার শেষমাথায় টর্চলাইট মেরে দেখি বৃদ্ধটি লাশের একটি পা ধরে পা'র মাংস খাচ্ছে। পায়ের হারটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বৃদ্ধটির মুখে আলো পড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ থেকে নীলআলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মুখে রক্তের দাগের মত এ্যাবরো-থেবরো মাংস লেপটানো। বিবৎস দৃশ্য। খুব বমি আসতে লাগল। আমি জোড়করে চেষ্টা করছি সবকিছু আটকিয়ে রাখতে। তীরের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি এতটুকু সাতার দিয়ে পার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভবনা। সবাইকে দেখলাম চিৎকার করছে আর দৌড়াচ্ছে। আমি বৃদ্ধের দিকে টর্চলাইট মেরে দাড়িয়ে রইলাম। বৃদ্ধটি আমার দিকে তাকালো...... উঠে দাড়ালো.....। ঝপাৎ।
যতক্ষণ পারলাম সাতার কাটতেই থাকলাম। শেষে মাটি হাটুতে বাজল। বুঝতে পারলাম তীরে এসে পৌছেছি। দৌড় লাগালাম। চিৎকার অনুসরণ করে কাশবনের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। হাজার-হাজার মানুষের চিৎকার। চারদিকে মশাল আর মশাল। কেউ কেউ ডাকাত ডাকাত করেও চিল্লাচ্ছে। কাশবনের ঐ পাশেই একটা বাড়ী আছে সেখানে সবাই পরে রইলো। আমিও গিয়ে ঐ খানে শুয়ে পড়লাম। চারদিকে মানুষ ঘিরে ধরেছে। কেউ কেউ আমার কাছে ঘটনা জানতে চাইলো....। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা। এর মাঝে একজন সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিল। সবার মাথায় পানি ঢালার ব্যাবস্থা করতে বলল। মামার হুশ হওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- ভাইগ্না বাইচ্যা আছ? আপা আমারে মাইরাই ফালতো। একে একে সবাই হুশ হলো। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। এর মাঝে দেখি শরীফের আব্বাও লোক নিয়ে হাজির। কেউ কেউ নদীর পাড়ে যাওয়ার সাহস দেখালো। শেষে আমি সবাইকে নিয়া নদীর পাড়ে গেলাম। নৌকা নাই। আমরা স্রোতের অনুকুলে হেটে যাচ্ছি। সবাই চিৎকার করে উঠল এই যে নৌকা। দেখলাম শুধু কংকালটা আছে। এর মাঝে একজন বলল দেখিতো মাটিতে রাক্ষসটার পায়ের দাগ আছে কিনা? আমরা নদীর পাড়ে কোন পায়ের দাগও পাইনি।